ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি

chak

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া :::

কক্সবাজারের চকরিয়ায় তিনদিন ধরে ভারী বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার তিন লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পতিত হয়েছে।

কোথাও এক টুকরো জায়গা অবশিষ্ট না থাকায় বন্যাদুর্গত এসব মানুষ সড়কের ধারে, উঁচু ভবনে আশ্রয় নিয়ে গবাদী পশুর সঙ্গে বসবাস করছে। তিনদিন ধরে এই অবস্থা অব্যাহত থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোন ত্রাণ তৎপরতা চালানো হয়নি। তবে শুকনো খাবার বিতরণের জন্য আজ বুধবার তিন লাখ বানভাসী মানুষের জন্য মাত্র এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

অবশ্য উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, এই বরাদ্দ প্রাথমিকভাবে দেওয়া হয়েছে। আরো বেশি করে ত্রাণ তৎপরতা চালানো হবে। ইতিমধ্যে বন্যা পরিস্থিতি বিষয়ে সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী, সচিবসহ সরকারের ঊর্ধতন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আজ সকালে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি দেখার জন্য চকরিয়ায় আসেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন। এর আগে তিনি প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে জরুরী সভা করেন।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাহেদুল ইসলাম জানান, লাগাতার ভারী বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীর ঢলের পানিতে এখনো তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে একলক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার পর দু-একদিনের মধ্যে আরো ব্যাপক পরিসরে ত্রাণ তৎপরতা চালানো হবে। শুরু থেকেই বন্যা পরিস্থিতি ভালভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি আমরা, এজন্য এখনো পর্যন্ত একজন মানুষও মারা যাওয়া বা নিখোঁজ থাকার খবর পাওয়া যায়নি।

তিনি আরো বলেন, প্রশাসনিকভাবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায়। কন্ট্রোল রুম খুলে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক খবরা-খবর নেওয়া হচ্ছে। পুরো উপজেলার কোথাও ১২ ফুট আবার কোথাও ৭-৮ ফুট পানির নিচে তলিয়ে থাকায় অঘোষিতভাবে বন্ধ রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বন্যার্তদের বিষয়ে খুবই আন্তরিক। তিনি ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন বন্যাদুর্গত একজন মানুষও যাতে অভূক্ত না থাকে। সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে চকরিয়ার বন্যাদুর্গত তিন লাখ মানুষের জন্য।

সরজমিন বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, তিনদিন ধরে বানের পানিতে ভাসছেন বন্যাদুর্গত মানুষগুলো। অনেক স্থানে বাড়ির চালা পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকায় কেউ সড়কের ধারে, উঁচু টিলায় এবং বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। বেশি বেকায়দায় পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। কয়েকফুট উচ্চতায় বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তিনদিন ধরে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে ১৮ ইউনিয়নের সঙ্গে সদরের। জরুরী প্রয়োজনে মানুষ এখনো নৌকায় চেপে যাতায়াত করছেন।

লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের বাসিন্দা কবির আহমদ (৬৫) বলেন, বন্যার পানি বাড়ির চালা পর্যন্ত উঠেছে। এতে গত তিনদিন ধরে অনাহারে-অর্ধাহারে পরিবার সদস্যদের নিয়ে পাশ্ববর্তী একটি ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এক মুঠো চালও ত্রাণ হিসেবে কেউ দেয়নি। শুধুমাত্র দুইবার খিচুড়ি পেয়েছি একজনের কাছ থেকে।

পাঠকের মতামত: